তামিলনাড়ু রাজ্যের পাম্বন দ্বীপের (রামেশ্বরম দ্বীপ) দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত শহর হল ধনুশকোডি। পাম্বনের দক্ষিণ-পূর্বে এবং শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই রহস্যময় শহর। রহস্যে ঘেরা এই শহরে পৌঁছোনো বেশ কঠিন। শহরের মূল ভূখণ্ডে যেতে গেলে পাম্বন বা রামেশ্বরম দ্বীপ অতিক্রম করতে হয়। পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ধনুশকোডি মূলত জেলেদের বাসস্থান। দক্ষিণী নকশার ছোটো ছোটো বাড়িতে বাস করেন জেলে ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। ধনুশকোডি হল ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী একমাত্র সীমান্ত যেটি কিনা পক প্রণালীর বালিয়াড়ির উপর অবস্থান করে। (All photo credit: wikimedia commons)
ভারতের শেষ রাস্তা
ধনুশকোডি ভারতের শেষ ভূমি হিসেবে পরিচিত। এবং এখানকার একটি নির্দিষ্ট পথকে বলা হয় ভারতের শেষ পথ। এই রাস্তা থেকে শ্রীলঙ্কা দূরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। তাই এখান থেকে শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট দেখা যায়। ধনুশকোডি হল ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে একমাত্র স্থল সীমানা, যা কিনা পাক প্রণালীর বালির টিলায় অবস্থিত। স্থলভাগে এটি মাত্র ৫০ গজ প্রসারিত। সেই কারণে এই স্থানকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্থান বলা হয়।
রহস্যময় ধনুশকোডি

তামিলনাড়ুর অন্যতম সেরা পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম ধনুশকোডির বেশিরভাগ অংশ আজও নির্জন। জানলে অবাক হবেন যে, এই স্থানে আগে বাড়িঘর, হাসপাতাল, হোটেল-ডাক অফিস সবই ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। এতে ১৫০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। এবং তারপর থেকেই এই স্থান জনশূন্য হয়ে পড়ে।
ভগবান রামের সঙ্গে এই স্থানের সংযোগ

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই ধনুশকোডি থেকেই লঙ্কা (বর্তমানের শ্রীলঙ্কা) যাওয়ার সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেলিন পুরুষোত্তম রাম। রামের নির্দেশে বানর কারিগর নলের তত্ত্বাবধানে রামসেতু নির্মাণ করে বানর সেনা। রামায়ণ অনুসারে, গভীর এই সমুদ্রে সেতু নির্মাণ সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে প্রতিটি পাথরের গায়ে রাম নাম লিখে সমুদ্রে ছুঁড়ে দিলে সেই পাথর ভাসতে থাকে। এবং এভাবেই পাথরের ভাসমান সেতু নির্মাণ করে সেই পথ দিয়ে রাক্ষসরাজ রাবণের দেশে পৌঁছোন রাম-লক্ষ্মণ এবং তাঁদের বানর সেনা। ভারতের রামেশ্বরম দ্বীপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপের সংযোগকারী এই সেতুটি ‘অ্যাডামস্ ব্রিজ’ নামেও পরিচিত। বর্তমানে ধনুশকোডি এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি সুন্দর বালুকাময় উপকূল দেখা যায়। NASA-র প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক চিত্র অনুযায়ী, এই বালুকাভূমি মানুষের দ্বারা সৃষ্ট। মহাকাব্য অনুসারে, সীতাকে উদ্ভারের পর রাম দেশে পৌঁছে তাঁর ধনুকের ডগা দিয়ে সেতুটি ধ্বংস করে দেন। সেই থেকেই এই শহরের নাম হয় ‘ধনুশকোডি’, যার অর্থ ‘ধনুকের সমাপ্তি’।
ভৌতিক স্থান ধনুশকোডি

১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে, রামেশ্বরমের এই শহরে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়। এবং এই কারণে ধনুশকোডি শহরটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান প্রায় ১,৮০০ জন। ১০০ জন বিশিষ্ট যাত্রীবাহী একটি ট্রেন ডুবে যায়। এরপর থেকেই এই শহরকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করে সরকার। ফলে এই স্থান এখন একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যদিও নেই নেই করেও এই দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ৫০০ জন মৎস্যজীবী বসবাস করেন। ফলে শহরজুড়ে ৫০টিরও বেশি কুঁড়েঘর রয়েছে। পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকে ধনুশকোডিকে ভৌতিক শহরও বলা হয়। দিনের বেলায় এখানে তাও লোকজনকে আসতে দেওয়া হয়। কিন্তু রাতের বেলা এখান প্রবেশ নিষেধ।
কীভাবে পৌঁছাবেন ধনুশকোডি

বিমান ভ্রমণ : ধনুশকোডির কাছাকাছি কোনও বিমানবন্দর নেই। নিকটতম বিমানবন্দর হল মাদুরাই। ধনুশকোডি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৯৮ কিলোমিটার। বিমান বন্দর থেকে ধনুশকোডি পৌঁছোতে গেলে ক্যাব বা বাসে চেপে রামেশ্বরমে চলে যেতে পারেন। তারপর সেখান থেকে অন্য পরিবহনে ধনুশকোডি যাওয়া যায়।
সড়কপথে : সড়কপথে ধনুশকোডি পৌঁছানো বেশ সহজ। রামেশ্বরম এবং অন্যান্য প্রধান এলাকা থেকে নিয়মিত বাস পাওয়া যায়।রামেশ্বরমে এসে ধনুশকোডি যাওয়ার বাসে যেতে পারেন।
ট্রেনে : নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল রামেশ্বরম। তামিলনাড়ুর প্রায় যে কোনও স্থান থেকেই ট্রেনে চেপে রামেশ্বরমে পৌঁছোনো যায়। স্টেশনটি ধনুশকোডির দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার।