ভারতের প্রাচীনতম রেলওয়ে স্টেশনগুলির কথা জানলে অবাক হবেন আপনিও

Spread the love


বেড়াতে কার না মন চায়? তবে সাধ থাকলেই কি সাধ্য হয় ঘুরতে যাওয়ার? ভারত এমনিতেও বড্ড সুন্দর। এই দেশের এক এক দিকে রয়েছে এক এক রূপ। তার মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় ঘুরতে যাওয়া মানেই বেশ অনেকটাই খরচ পড়ে। তবে আপনি যদি ট্রেনে চেপে যাতায়াত করেন, তা হলে এই ভ্রমণের অনেকটাই কিন্তু কম খরচে হয়। আবার বহু মানুষ আছেন, যাঁরা রোজ কাজ করার জন্য শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে যাওয়ার উদ্দেশ্যেও ট্রেন নেন। ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন বা আই আর সি টি সি নিঃসন্দেহে বহু বছর ধরে ভারতের এবং ভারতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পরিষেবা দিয়ে চলেছে। ভারতীয় রেলওয়ে বিশ্বের বৃহত্তম, প্রাচীনতম এবং ব্যস্ততম রেল নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি এবং এর একটি সু-পরিচালিত নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কিন্তু আপনি কি জানেন ভারতের রেলওয়ের প্রাচীনতম রেল স্টেশনগুলি কোনগুলি? সেগুলি ঘিরে কেমন ধরনের গল্প রয়েছে? এই সব জানতে গেলে এই প্রতিবেদন পড়তে হবে। এই প্রতিবেদন আপনাকে দেশের প্রাচীনতম কিছু রেল স্টেশনের কথা বলা হবে, যেগুলি স্বতন্ত্র এবং অসাধারণও বটে। (All photo credit: wikimedia commons)

বারোগ রেলওয়ে স্টেশন –

বিখ্যাত কালকা ও শিমলা রেললাইন সমন্বিত এই বারোগ রেলওয়ে স্টেশন আসলে হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ে অবস্থিত একটি ছোট্ট রেলওয়ে স্টেশন। ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দেওয়ার পরে এই রেল স্টেশনটি কর্নেল বারোগের নামে নামকরণ করা হয়েছিল এবং ১৯০৩ সালে প্রথম এটির উদ্বোধন করা হয়েছিল। একটি টানেলের শুরুতে অবস্থিত এই স্টেশনে স্কটিশ শৈলীর রুফ বা ছাদ রয়েছে এবং এটি ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি রত্নসম বলে মনে করা হয়।

পুরনো দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন –

পুরনো দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন -

১৮৬৪ সালে কাজ শুরু করার পরে পুরনো দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনটি ১৯০৩ সাল নাগাদ তার বর্তমান রূপ পায়। পৃথিবী বিখ্যাত চাঁদনি চকের কাছে অবস্থিত এই পুরনো দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনটির পরিকাঠামো লাল কেল্লার নানা বৈশিষ্ট্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। এটি উত্তর ভারতের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশনগুলির মধ্যে অন্যতম এবং প্রত্যেক দিন ২ লক্ষেরও বেশি যাত্রীদের পরিষেবা দেয় এই পুরনো দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনটি৷

পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জংশন –

পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জংশন -

এই হাওড়া জংশন দেশের আরও একটি অন্যতম প্রাচীন রেলওয়ে স্টেশন যা ১৮৫৪ সালে তার কার্যক্রম শুরু করে। হাওড়া জংশন শুধু মাত্র ভারতের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন নয়, বরং বিশ্বের অন্যতমও বটে। এই রেলওয়ে স্টেশনে মোট ২৩ টি প্ল্যাটফর্ম আছে। এবং প্রতি দিন এক মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে পরিষেবা প্রদান করে এই স্টেশন। এই স্থানটিতে গেলে আপনি সহজেই ১৯৫০-এর দশকে ফিরে যাবেন। বর্তমানে ওল্ড কমপ্লেক্সের পাশাপাশি এখানে চালু করা হয়েছে হাওড়া জংশনের নিউ কমপ্লেক্সও। যেহেতু প্রতি দিন ৬০০ টিরও বেশি ট্রেন এই হাওড়া স্টেশন দিয়ে যায়, তাই এটিকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন বলে মনে করা হয়।

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস –

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস -

এটি ভারতের প্রাচীনতম রেলওয়ে স্টেশনগুলির মধ্যে একটি, যেটির কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৫৩ সালে। ১৮৮৮ সালে এটি তার বর্তমান আকারে রূপ পায় এবং দেশের সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা রেলওয়ে স্টেশন হিসাবেও বিখ্যাত৷ আগে এই রেলওয়ে স্টেশনটি ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস নামে পরিচিত ছিল, যা এখনও গথিক স্থাপত্যের সবচেয়ে চমৎকার উদাহরণ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। এটি ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান পেতেও সক্ষম হয়েছে এবং এটি মুম্বইয়ের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন।

লখনউ চারবাগ রেলওয়ে স্টেশন –

লখনউ চারবাগ রেলওয়ে স্টেশন -

এই লখনউ চারবাগ রেলওয়ে স্টেশন শুধু বাহ্যিক ভাবে সুন্দরই নয়, ভারতের প্রাচীনতম রেলওয়ে স্টেশনগুলির মধ্যে একটি। ১৯১৪ সালে নির্মিত এই সুন্দর রেলওয়ে স্টেশনে রাজস্থানি এবং মুঘল স্থাপত্যের মিশ্রণ রয়েছে, যা খুব স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটক এবং যাত্রীদের নজর কেড়ে নেয়। এটি সেই বিখ্যাত জায়গা, যেখানে ১৯১৬ সালে জওহরলাল নেহরু প্রথম মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এই লখনউ চারবাগ রেলওয়ে স্টেশনে মোট ৯ টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এটি উত্তর ভারতের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশনগুলির মধ্যে একটি। এবং মজার বিষয় হল, আপনি যদি উঁচু কোনও জায়গা থেকে এই চারবাগ রেলওয়ে স্টেশনকে দেখেন, তা হলে এটিকে একটি দাবা বোর্ডের মতো মনে হয়। সেখানে স্তম্ভ এবং গম্বুজগুলিকে একটি দাবা খেলার নানা অনুষঙ্গের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়।

ভারত আক্ষরিকই সৌন্দর্যে ভরা এবং ঐতিহ্যপূর্ণ একটি দেশ। ভারতের এই সুপ্রাচীন রেলওয়ে স্টেশনগুলি সেই উদাহরণই তুলে ধরে বার বার।



Source link