আমাদের দেশে অবশ্য কালোজাদু বা কালাজাদু করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তন্ত্র-মন্ত্রের মতো কার্যকলাপ এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে। এই একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগেও এমন অনেক লোক আছেন যাঁরা এসব কিছু বিশ্বাস করেন এবং গোপনে এই জাদুবিদ্যার প্রয়োগ করেন। ভারতে এমন অনেক শহর রয়েছে যেগুলি তাদের কালা জাদুর জন্য পরিচিত। মুঘল এবং ব্রিটিশদের মতো জাতির লোকেরাও এই সব শহরে প্রবেশের আগে দশ বার ভাবতেন। সেই শহরগুলি আজও অবস্থান করছে স্বমহিমায়। (All photo credit: istock.com)
কুশভদ্রা নদী, ওড়িশা
ওড়িশার কুশভদ্রা নদীর ধারে বেড়াতে গেলে দেখতে পাবেন তার চারপাশে এবং নদীর নীচে অনেক হাড় এবং মাথার খুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই স্থানে অত্যাধিক হারে কালো জাদুর চর্চা করা হয়ে থাকে। অবশ্য শুধু ঘাটেই নয়, জনমানবহীন নির্জন উপকূলীয় স্থানেও তান্ত্রিক এবং কালো জাদু করতে দেখা যায়।
মণিকর্ণিকা ঘাটে তন্ত্র-মন্ত্র, বারাণসী

সুন্দর এবং পবিত্র প্রাচীন নগরী বারাণসী তার মন্দির এবং ঘাটের জন্য পরিচিত। এই স্থানটিও তন্ত্র-মন্ত্র এবং কালো জাদুর জন্য বিখ্যাত। এখানে অনেক শ্মশানে পোড়া মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ খায় অঘোরিরা। তাদের বিশ্বাস, এতে তাদের ক্ষমতা নাকি বৃদ্ধি পায়। মণিকর্ণিকা ঘাটে গোপনে হয় কালো জাদু।
নিমতলা ঘাট, কলকাতা

শুধু বারাণসী বা ওড়িশাতেই যে কালো জাদু হয তা নয়, তালিকায় রয়েছে আমাদের প্রিয় শহর কলকাতাও। উত্তর কলকাতার নিমতলা ঘাটও কালো জাদুর জন্য বেশ বিখ্যাত। মধ্যরাতে এলাকা যখন একেবারে নির্জন হয়ে পড়ে তখন অঘোরিরা নিমতলা ঘাটে এসে ঘাটে পোড়া মৃতদেহের দেহাবশেষ খায়। এর পাশাপাশি ভোর হওয়ার আগে তাঁরা এখানে বসে কিছুক্ষণ ধ্যানও করেন।
মায়ং, অসম

অসমের মায়ং গ্রামের বাসিন্দারা যুগের পর যুগ ধরে তন্ত্র-মন্ত্র, কালা জাদু, ঝাড়ফুঁক নিয়েই বেঁচে আছেন। আজকের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও মায়ং গ্রামের মানুষগুলো এখনও অলৌকিকতা এবং কুসংস্কারের দুনিয়ায় বাস করেন। তাঁদের কাছে অবশ্য সে সবই সংস্কার। রহস্যময় এই গ্রামকে ঘিরে বিশ্ববাসীর আগ্রহের শেষ নেই। বিশ্বাস করুন বা না করুন প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক মায়ং গ্রামের কালো জাদুর আকর্ষণে হাজির হন সেখানে। কালো জাদুর ভূমি মায়ং অসমের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অসমের মরিগাঁও জেলার ছোট্টো গ্রাম এটি। গ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। গ্রামের নাম মায়ং হওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি কিংবদন্তী রয়েছে। কারও মতে, ’মায়ং’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘মায়া’ থেকে। কথিত আছে, এই গ্রামে নাকি জাদুবিদ্যা চর্চা করতেন ভীমের ছেলে মায়া বিদ্যার সম্রাট ঘটোৎকচ। শ্রীকৃষ্ণের বরে ঘটোৎকচ ছিলেন মায়া বিদ্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ। ঘটোৎকচের মায়াবিদ্যা চর্চার কারণেই গ্রামের নাম নাকি হয়েছিল মায়ং। ভীম এবং হিড়িম্বার ছেলে ঘটোৎকচই ছিলেন এই প্রদেশের রাজা। ঐন্দ্রজালিক ও মায়াবী রাজার অধীনে বসবাস শুরু করেন জাদুকর, তান্ত্রিক, মায়াবিনীরা। তাঁদেরই বংশধরেরা নাকি এখানে আজ বসবাস করেন। এবং পূর্ব পুরুষদের সেই পেশা আজও বজায় রেখেছেন তাঁরা। গ্রামের রাস্তা ঘাটে, অরণ্যে, নদীর পাড়ে তাঁদের সকলকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। “মায়ং – ল্যান্ড অফ ব্লাক ম্যাজিক অ্যান্ড উইচক্রাফ্ট” নিবন্ধে পাতলা বাতাসের মধ্য দিয়ে মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, মানুষকে পশুতে রূপান্তরিত হওয়া, কিংবা পশুরউপর জাদু করে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা ইত্যাদি অনেক কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
সুলতান শাহী, হায়দরাবাদ

হায়দরাবাদকেও কালা জাদুর চর্চা হয়ে থাকে। আর এর জন্য এখানকার সুলতান শাহী স্থানটি বেশ বিখ্যাত। কথিত আছে যে, এই ধরনের লোকেরা বিভিন্ন তান্ত্রিক বা অঘোরি কালো জাদু করে টাকা উদ্ধার করে। এবং তারপর অনেকে এর বিনিময়ে যৌন মিলন চায়। কেউ আবার বিনিময়ে চায় পশুবলি। সুলতান শাহী ছাড়াও চিত্রিকা, মুঘলপুরা ও শালিবন্দ, এই তিন স্থানেও তন্ত্র-মন্ত্র করা হয়।