সঙ্গীর সঙ্গে ঘোরার জন্য অনেকেই বিদেশি রোম্যান্টিক স্থানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণের খরচের অর্ধেকেরও কম টাকায় যদি দেশে ঘুরে নিতে পারেন তাহলে তো বেশি ভালো হয়। আর বিদেশি লোকেশনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে ঈশ্বরের নিজের দেশ কেরল। সবুজে ঘেরা নদীর হাউস বোটে প্রিয়জনের সঙ্গর কোনও তুলনা হয় না। হাউসবোটগুলি এখন ওয়েডিং ফোটোশুটের জন্যও দারুণ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। তাহলে আজ কেরলের সুন্দর জায়গাগুলি সম্পর্কে জেনে নিন। (All photo credit: freepik.com)
মুন্নার
কেরলের নাম করলে সবার আগে মনে পড়ে মুন্নারের নাম। মুন্নার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৬০০ মিটার। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এই শহরের যেদিকেই তাকাবেন দেখবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। মুন্নারে দেখতে পারেন এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান, মাত্তুপেট্টি বাঁধ, পোথামেড়ু ভিউ পয়েন্ট, আনাইমুদি, ব্লসম পার্ক, দেবীকুলাম, পল্লিভসল, টাটা টি মিউজিয়াম, ভত্তভড়া, আত্তুকল জলপ্রপাত, চিয়াপারা জলপ্রপাত, কুদালা হ্রদ, ন্যায়ামকড়, মীসাপুলিমালা, কোক্কুমালাই, লক-হার্ট গ্যাপ, চিথিরাপুরম, রাজামালা, টপ স্টেশন, মারায়ুরডলমেনস্, ইন্দো সুইস ডেয়ারি ফার্ম, লাইট অফ পাই চার্চ।
থেক্কাডি

দেশের বৃহত্তম বাঘ সংরক্ষণের কেন্দ্র হল থেক্কাডি। কেরলের জঙ্গলে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা থাকলে এখানে যেতে পারেন। ইদুক্কি জেলার কেরল-তামিলনাড়ু সীমান্তের কাছে অবস্থিত, থেক্কাডিতে দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা প্রায়ই ভিড় জমান। এখানকার সেরা আকর্ষণ হল এখানকার টাইগার রিজার্ভ। পেরিয়ার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ৭৭৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ১৯৭৮ সালে এটিকে একটি বাঘ সংরক্ষণাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। বাঘ ছাড়াও এখানে প্রায় ৬ টিরও বেশি প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ২৬৫ প্রজাতির পাখি বসবাস করে।
কোভালম

সমুদ্রসৈকতে তো অনেক ঘুরেছেন। কিন্তু কেরলের কোভালম সৈকতে একবার ঘুরে আসুন। কথা দিচ্ছি, এত সুন্দর, পরিচ্ছন্ন এবং শান্ত সৈকত বিশ্বর কোথাও পাবেন না। এখানকার লাল-সাদা আলোর লাইট হাউজ যেন সৈকতের মনকে রাঙিয়ে দেয় সময়ে সময়ে। কোভালমের সঙ্গেই সারি বেঁধে আছে হাওয়া সৈকত এবং সমুদ্র বিচ। সারাটা দিন এই কোভালম, হাওয় কিংবা সমুদ্র বিচ-এ সারাদিন কেটে যাবে। সৈকতের কাছেই রযেছে ভিঝিনজাম জামা মসজিদ এবং সাগরিকা মেরিন রিসার্চ অ্যাকোয়ারিয়াম। তিরুবনন্তপুরেমর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। এখানে কোভলম বিচ ছাড়াও হাওয়াই বিচ, সমুদ্র বিচ, চোয়ারা বিচ, আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন নদী, মিউজিয়াম, মন্দির ইত্যাদি ঘুরে দেখুন। কোভালম যাওয়া সেরা সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস।
আলেপ্পি

কেরালার অপূর্ব সুন্দর এই শহর আলেপ্পির অপর নাম প্রাচ্যের ভেনিস। ব্রিটিশ আমল থেকেই অত্যাধুনিক অথচ সাবেকি সাজে সজ্জিত। এখানকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অপূর্ব। আলেপ্পির চারদিকে সমুদ্র এবং হ্রদের ছড়াছড়ি। এখানকার নদীগুলির জল অসম্ভব স্বচ্ছ এবং পরিবেশ। শহর ঘুরে দেখলে যে সমস্ত স্থাপত্য-ভাস্কর্য বা ভবনগুলি রয়েছে সেগুলি দেখলে ইতালির সুসজ্জিত শহরের কথাই মনে কারবে। এখানেও প্রায় সারা বছরই ঘুরতে যেতে পারেন। ঘুরে দেখুন ভেমবানাড় হ্রদ, আলেপ্পি বিচ, মারারি বিচ, কৃষ্ণপুরম প্যালেস, পথিরমনল, কুট্টানড় ব্যাকওয়াটার, আর্থুকল চার্চ, অম্বালাপুঝা মন্দির, মন্নারশালা মন্দির, কারুমাদিকুট্টন মূর্তি, সেন্ট মেরি রোরান চার্চ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসালয়।
কোচি

কোচি শহরটি বয়সের ধারে ভারে সমৃদ্ধ। যদিও বয়স তার কাছে সংখ্যামাত্র। না হলে সেই কোন ১৩৪১ সালের সমুদ্র বন্দরটিকে দেখলে আজও পর্যটকদের মন আনচান করে ওঠে। এই শহরে পা রাখলে একদিকে যেমন ঔপনিবেশিক নিদর্শন চোখে পড়বে, তেমনই চোখে পড়বে মাছ ধরার জন্য বড় খিলানে লাগানো এখানকার বিখ্যাত চিনা জাল। নামে চিনা হলেও এটি কিন্তু খাঁটি ভারতীয়। কোচির দুর্গ, ভ্যাপিন দ্বীপ, ভ্যাপিন বিচ, চেরাই বিচ, অন্ধকারানঝি বিচ, মেরিন ড্রাইভ, বলঘাট্টি দ্বীপ, গুরুভায়ুর, সহ প্রচুর দর্শনীয় স্থান। কোচি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কিংবা কোচি রেলওয়ে জংশনে পৌঁছে শহর ঘুরতে পারেন।
কীভাবে কেরল যাবেন-

বিমান : বিশ্বের যে কোনও স্থান থেকে আকাশপথে কেরল পৌঁছানো খুব সহজ। এই রাজ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে, যা দেশের অন্যান্য শহরের সঙ্গে সংযুক্ত। তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি কেরলের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেরলের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত। এবং উত্তরে রয়েছে কালিকট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
সড়ক পথে : কেরলের ১৭, ৪৭ এবং ৪৯ নম্বর জাতীয় সড়কের মাধ্যমে দেশের যে কোনও অংশ থেকে সহজেই যাতায়াত করা যায়।
রেলপথ : কেরলের ২০০টি-র বেশি স্টেশন একে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এছাড়াও, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা এবং অন্যান্য প্রধান ভারতীয় শহরগুলি থেকে কেরলের সরাসরি ট্রেন রয়েছে।