উত্তর-পূর্ব ভারত, সেভেন সিস্টার্স, সাত সহোদরা, মণিপুর, মিজোরাম, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়,

Spread the love


দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া…
সেই কোনকালে রবি ঠাকুর কথাগুলি বলেছিলেন। যাঁরা বেড়াতে ভালোবাসেন তাঁরা কিন্তু আজও কবিগুরুর এই কথাগুলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। “ঘর হতে দুই ফেলিয়া…” মানে বাড়ির কাছাকাছি। ঘর হল বাংলা। আর ঘরের কাছেই এরকম প্রচুর বেড়ানোর জায়গা। ঘরের কাছে মানে হিল্লি দিল্লি নয়, বাংলার পূর্ব দিকে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স বা সাত সহোদরার নানা অজানা স্থান ঘুরে দেখতে পারেন সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনীকে নিয়ে।
উত্তর-পূর্ব ভারত তার অতুলনীয় সৌন্দর্যের জন্য দেশ তো বটেই, বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ বিখ্যাত। মণিপুর, মিজোরাম, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা। এই সাতটি রাজ্যকে একসঙ্গে বলা হয় সেভেন সিস্টার্স বা সাত সহোদরা। পরিবেশ-বান্ধব গন্তব্যস্থল, হোমস্টে, রাজ্যগুলির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আদিবাসী গ্রামের আকর্ষণে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক সেখানে গিয়ে ভীড় জমান। (All photo credit: pexels.com)

মণিপুর

অবস্থানের কারমে মণিপুরকে বলা হয় “ভারতের রত্ন শহর”। মণিপুর হল নয়টি পাহাড় দিয়ে বেষ্টি একটি ডিম্বাকৃতির উপত্যকা। এই রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনও তুলনা হয় না। রাজ্যের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল লোকটাক হ্রদ, যা সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ। এর পাশাপাশি, রয়েছে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যান। এই অভয়ারণ্যে রয়েছে বিখ্যাত মণিপুরী সাংগাই হরিণ। এটি বিলুপ্ত প্রজাতির হরিণ। মোরেহ শহরের মধ্য দিয়ে ঘুরে আসা যায় ইন্দো-বর্মা সীমান্ত থেকে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই, মণিপুরে খুব তাড়াতাড়ি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত হয়।

মিজোরাম

মিজোরাম

সমগ্র সাত সহোদরা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো রাজ্য হল মিজোরাম। মায়ানমার, বাংলাদেশ, অসম, মণিপুর এবং ত্রিপুরা দ্বারা বেষ্টিত ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তে অবস্থিত এই ছোট্টো রাজ্যটি। মিজোরাম বাঁশের জঙ্গল, অপূর্ব সুন্দর সবুজ পাহাড় এবং জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত। রাজ্যের ভৌগোলিক বৈচিত্র এখানকার প্রধান আকর্ষণ। প্রায় সারা বছরই এখানকার আবহাওয়া মনোরম থাকে। তাই বছরের যেই সময়ে ইচ্ছে সেই সময়ই মিজোরাম থেকে বেড়িয়ে আসুন। মিজোরামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব, নৃত্য এবং রকমারি উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের আকর্ষণের কোনও তুলনা হয় না।

অসম

অসম

উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সেরা সুন্দরী হল আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য অসম। এটি যেন আমাদের দেশের এক রহস্যময় গুপ্তধন। এই রাজ্য দিয়েই বয়ে গেছে রাজকীয় ব্রহ্মপুত্র নদ। জীববৈচিত্র, স3বুজ অরণ্য এবং প্রচুর চা বাগানে সমৃদ্ধ অসমকে পূর্ব ভারতের স্বর্গ বললে বুঝি ভুল হয় না। বাংলাদেশ এবং ভুটানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমানা ভাগ করে নিয়েছে অসম। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান এখানকার অন্যতম সেরা আকর্ষণ। এই জঙ্গলেই দেখা মেলে বিখ্যাত এক শিংওয়ালা গন্ডারের। বেড়ানোর তালিকায় রয়েছে মাজুলি দ্বীপ, কামাক্ষ্যা মন্দির, মায়াং গ্রাম আরও কত কী। তীর্থ ভ্রমণ থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণী কিংবা শুধু অবসরযাপনের পরিকল্পনা থাকলে অসম একটি উপযুক্ত স্থান হতে পারে।

অরুণাচল প্রদেশ

অরুণাচল প্রদেশ

অরুণাচল প্রদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম রাজ্য। উপত্যকা, সবুজ উদ্ভিদ এবং বিচিত্র প্রাণীজগৎ , অসংখ্য নদী এবং তৃণভূমি দিয়ে সজ্জিত এই রাজ্য ভ্রমণের কোনও তুলনা হয় না। এছাড়াও এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি হল অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস্। তালিকায় রয়েছে ট্রেকিং, অ্যাংলিং, বোটিং এবং রাফটিং। অরুণাচল প্রদেশ বহিঃ হিমালয় এবং পাটকোই রেঞ্জের অংশ। এই কারণে রাজ্যের বন্যপ্রাণী, উপত্যকা, নদী, পাহাড় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র অতুলনীয়।

মেঘালয়

মেঘালয়

সংস্কৃত ভাষায় মেঘালয় শব্দের অর্থ “মেঘের বাড়ি”। তাই মেঘালয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন মানে আপনার চারপাশে ভেসে থাকা মেঘ খুঁজে পেতে পারেন অনায়াসে। গভীর সবুজ উপত্যকা, বিশ্বের সবচেয়ে স্বচ্ছ জলের নদী এবং এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামটি রয়েছে এই মেঘালয়েই। মেঘালয়ে গেলে বিভিন্ন গুহা, উমঙ্গট হ্রদ, ডাউকি নদী, চেরাপুঞ্জি, দোতলা প্রাকৃতিক সেতু সহ অনেক অভিনব পর্যটন স্থল রয়েছে মেঘালয়ে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এখানকার জায়গাগুলি ফুলে ফুলে সেজে ওঠে। এই সময়টাই এই স্থান দেখার সেরা সময়। আবার কেউ যদি মেঘালয়ের বৃষ্টিতে বেড়াতে চান তাহলে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এই সময় আবার গোটা রাজ্য সবুজে সবুজ হয়ে ওঠে।

নাগাল্যান্ড

নাগাল্যান্ড

উত্তর পূর্ব ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান মনে হয় নাগাল্যান্ড। এখানকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং সৌন্দর্য যেমন অতুলনীয় তেমনই অনন্য এখানকার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পরব দারুণ আকর্ষণীয়। নাগাল্যান্ডের আকর্ষণগুলির মধ্যে রযেছে জুকোউ উপত্যকা, জাপফু শৃঙ্গ, বিখ্যাত শিলোই হ্রদ ইত্যাদি। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মাসে এখানকার হর্নবিল উৎসব একটি বিশ্ববিখ্যাত উৎসব। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই পরব দেখতে নাগাল্যান্ডে হাজির হন প্রতি বছর। এই রাজ্যের হস্ত নির্মিত কারুশিল্প, ব্যাগ, ঘর সাজানোর জিনিস অত্যন্ত বিখ্যাত এবং আকর্ষণীয়।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরা

ত্রিপুরা হল বিভিন্ন ধর্মীয় ও উপজাতীয় সংস্কৃতির মিশ্রণের আবাসস্থল। ত্রিপুরা ভ্রমণে গিয়ে কয়েকশো বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শণ আজও দেখতে পাওয়া যায়। সংস্কৃতির পীঠস্থান ত্রিপুরা সব বয়সের পর্যটকদের কাছেই দারুণ আকর্ষণীয়। স্থানীয়দে উষ্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার, রাজ্যের বন ও বন্যপ্রাণী, প্রাসাদ, প্রাচীন স্থাপত্য সবই দারুণ উপভোগ্য। এই রাজ্যের প্রধান শিল্পগুলির মধ্যে একটি হল হস্তশিল্প এবং কারুশিল্প। কুয়াশাচ্ছন্ন তৃণভূমি, সবুজ উপত্যকা এবং পাহাড় সবই পাবেন ত্রিপুরা ভ্রমণের সময়।



Source link