উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনও তুলনা হয় না। উত্তর ভারতের তুলনায় এই স্থানগুলি একটু অভিনব। জঙ্গল, নদী, পাহাড়, ঝরণা সবই আছে এখানে, কিন্তু একটু অন্যরকম। তাছাড়া উত্তর ভারতের হিমালয়ের থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের হিমালয়ে ভিড় তুলনামূলক কম হয়। আর এই স্থানেরই এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে শুনলে হাঁ হয়ে যাবেন। কোনও কোনোটির বিবরণ শুনলে তো গা গুলিয়েও উঠতে পারে। তবে বলে না দিলে বুঝতে পারবেন না যে কী খাচ্ছেন।
ওয়াচিপা, সিকিম
সিকিমের খাবার মধ্যে নেপালি, ভুটিয়া এবং লেপচা খাবারের প্রভাব স্পষ্ট। আর এই পাঁচ মিশালি স্বাদই সিকিমের খাবারকে যেন আকর্ষণীয় করে তোলে। এরকমই সিকিমের রাই নামের এক উপজাতির খাবার হল ওয়াচিপা। এই খাবার শুধুমাত্র তাঁদের অনুষ্ঠান বাড়িতেই নাকি তৈরি হয়। একটি থালায় ভাত, মুরগির কিমা এবং এক ধরনের বিশেষ মশলা দিয়ে তরি করা হয়। মশলাটি তৈরি করা হয় মুরগির পোড়া পালক গুঁড়ো করে। এর স্বাদ খানিকটা তেতো হয়। আর এই খাবারের নিরামিষ সংস্করণে মুরগির পরিবর্তে দামলাপা নামের এক ধরনের উদ্ভিদের ফুল দেওয়া হয়। এর স্বাদও তেতো। (photo credit :wikipedia)
ব্যাঙের পা, সিকিম

আমরা যেমন মুরগির ঠ্যাং বা লেগ পিস খেতে ভালোবাসি তেমনই সিকিমের লেপচা সম্প্রদায়ের প্রিয় খাবার হল ব্যাঙের পা। আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। চিন, কোরিয়া বা ব্যাংককের লোকেরাই নন, সিকিমের লোকেরাও ব্যাঙের পা খান। লেপচা সম্প্রদায়ের মানুষদের বিশ্বা, ব্যাঙের ঠ্যাং রান্না করে খেলে পেটের রোগ নাকি সেরে যায়। (photo credit :wikipedia)
এরি পোলু, অসম

অসমের সিল্ক শাড়ি বেশ মূল্যবান। এই সিল্ক তৈরির জন্য অসমে বিপুল পরিমাণে রেশম চাষ হয়। রেশম পোকা থেকে রেশম ছাড়িয়ে নেওয়ার পর অবশিষ্টাংশকে বলা হয় পোলু। এই পোলু বা রেশম কীটের পিউপা রান্না করা হয়। অসমের ঐতিহ্যবাহী ভেষজ এবং মশলা দিয়ে পিউপার তরকারি তৈরি হয়। এর সঙ্গে পরিবেশন করা হয় গেঁজে ওঠা কচি বাঁশ। (photo credit: Navbharat Times)
জাদোহ স্নাম, মেঘালয়

মেঘালয়ের বেশিরভাগ খাবারই তৈরি হয় প্রধানত মাংস দিয়ে। এই জাহোহ খাবারটিও তৈরি হয় মাংস দিয়ে। স্থানীয় ভাষায় ‘জা’ কথার অর্থ ‘ভাত’ এবং ‘দোহ’ হল ‘মাংস’। এটি হল মূলত খাসি শূকরের মাংস এবং চর্বি দিয়ে রান্না করা ভাত। ভাত মাংস আপত্তি কারও থাকার কথা নয়। কিন্তু এই জাদোহ স্নামের স্পেশাল উপকরণটি হল শূকরের রক্ত।
দো খলিহ, মেঘালয়

দো খলিহ হল একটি খাসি শূকরের স্যালাড। মাংস ছাড়াও এতে দেওয়া হয় শূকরের ঘিলু, কান, জিভ সহ পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা এবং মশলা।
স্টিমড হর্নেট লার্ভা, নাগাল্যান্ড

জানেন কি যে, নাগাল্যান্ডের স্থানীয় সম্প্রদায়গুলি ১০০টিরও বেশি ভোজ্য পোকা খেয়ে থাকেন! এ পোকাগুলি রান্না, সিদ্ধ, ভাজা কিংবা রোস্ট করে খাওয়া হয়। আবার কিছু কীটপতঙ্গ যেমন, পিঁপড়া, নানা ধরনের মাছি ও মৌমাছির কাঁচা লার্ভাও তাঁরা খেয়ে থাকেন। স্টিমড হর্নেট লার্ভা বেশিরভাগই রাস্তায় বিক্রি হতে দেখা যায়। (photo credit: wikipedia)
এরোম্বা, মণিপুর

মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়ের প্রিয় খাবার হল এরোম্বা। সিদ্ধ সবজি, নাগা কিং লঙ্কা এবং শুঁটকি মাছ একসঙ্গে মেখে এটি রান্না করা হয়। রান্নাটি হয় মাটির পাত্রে। এতে তেল ছাড়া আর কোনও মশলা দেওয়া হয় না। (photo credit: wikipedia)
গন্ধযুক্ত ছাড়পোকা, অরুণাচল প্রদেশ

শুনলে গা গুলিয়ে উঠতে পারে। তবে অরুণাচল প্রদেশের আদি এবং গ্যালো উপজাতিদের মধ্যে ছাড়পোকা খাওয়ার চল আছে। এটি তাঁদের প্রিয় পদ। নদীর ধারে পাথরের নীচে ছাড়পোকা জড়ো করা হয়। সেগুলি কাঁচা কিংবা সিদ্ধ করে কাঁচালঙ্কা দিয়ে খান তাঁরা। (photo credit :wikipedia)